বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিচার চলছে কারাগারের ভেতরে আদালত বসিয়ে।
এটাকে অসাংবিধানিক, বেআইনী ও ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে বিএনপি প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও প্রতীক অনশন জাতীয় কোমল কর্মসূচি দিয়েছে।
অত্যান্ত প্রতিকূল সময়ে কয়েকদিন আগে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে নয়াপল্টনে তারা যে বিশাল সমাবেশ করেছে তা সকলকে অবাক করে দিয়েছে।
গত ১০ বছর ধরে বিএনপি’র নেতা কর্মীরা ব্যাপক হারে গ্রেফতার, জেল, নির্যাতন, গুম, খুন ও হয়রানীর শিকার। এতদ সত্বেও এটা সর্বজনবিদিত যে বর্তমান সময়ে নির্বাচন যদি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তাহলে বিএনপি খুব ভাল ফল করবে এবং আবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তাদেরই বেশী। অর্থাৎ বিএনপি এখন সবচাইতে জনপ্রিয় দল।
বিএনপি’র যারা সমালোচক তারা মনেকরেন বিএনপি’র শৃংখলা, সাংগঠনিক কাঠামো ইত্যাদি খুবই দূর্বল। তারা বলেন বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ। সরকারের দূর্নীতি দূ:শাসন সহ সরকারের কোনও ব্যর্থতাকেই তারা ক্যাশ করে জনসম্পৃক্ত গণ-আন্দোলনে রূপদান করতে পারেননি।
বিএনপি’র আরও সমলোচনা হল: বিএনপি পরিবার কেন্দ্রীক দল। জিয়া পরিবারই এই দলের মূল স্তম্ভ। এর বাইরে এখানে যারা নেতা তাঁরা সবাই হুকুম বরদার, তালপাতার সেপাই। এই দলের গঠনতন্ত্র, সাংগঠনিক বিধি বিধান লোক দেখানো ব্যপার স্যপার। নেতৃত্ব নির্বাচন, কমিটি গঠন সবই হয় শীর্ষ নেতৃত্বের ইচ্ছায়। বিএনপি ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্ব দিলেও জোটের শরীক বাকী দলগুলোকে তারা মূল্যায়ন করেনা। তাদের মতামত বা অভিপ্রায় কে গুরুত্ব দেয়না।
বিএনপি তে স্বীকৃত ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযাদ্ধা সবচাইতে বেশী। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার। তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জীবন ও জীবিকার মায়া ত্যাগ করে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘোষনা প্রদান করেন। তিনি দেশের জন্য যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া অন্যতম বীরোত্তম। বিএনপি দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করে। সীমিত গণমাধ্যমের নীতি প্রত্যাহার করে নেয়। সংবিধানে মহান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস যুক্ত করে। ধর্মীয় রাজনৈতিক দল করার উপর থেকে বিধি নিষেধ তুলে নেয়। বিএনপি’র বিরুদ্ধে বড় একটি অভিযোগ তোলা হয় যে, বিএনপি স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পূণর্বাসিত করেছে।
৪৭ বছরের বাংলাদেশে বিএনপি শাসন চলেছে বেশী সময় ধরে। তাদের হাতে দেশের অবকাঠামোগত মৌলিক উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক মাত্রায়। আবার তাদের বিরুদ্ধে আছে দূর্নীতির ঢালাও অভিযোগ। বিএনপিকে ইসলামিস্টরা বলে জাতীয়তাবাদী-সেক্যুলার আর সেক্যুলাররা বলে বিএনপি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের পৃষ্ঠপোষক। বিএনপি ভারত বিরোধী, মার্কিন ব্লকের সাথে হৃদ্যতা আছে তাদের।
সংক্ষেপে এগুলোই হল- বিএনপি’র সুনাম-দুর্নাম বা সফলতা-ব্যর্থতা। বিএনপি নামক মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ।
বিএনপির যারা নেতা-কর্মী বা নীতি নির্ধারক তারা কী এই উভয় দিক মূল্যায়ন করে বিএনপি তে সক্রিয়? অর্থাৎ এর ভালো-উজ্বল দিক গুলোর যথাযথ প্রচারে তারা কী মনযোগী? একইভাবে এর যে উইকনেস বা দূর্বলতা তা নিরোধের জন্য তারা কী যত্নশীল?
বিএনপি’র যারা শত্রু বা আদর্শগতভাবে বিরোধী তারাও কী বিএনপিকে সার্বিক বিচারে মূল্যায়ন করেন? না শুধু নেগেটিভ বা নিজেদের স্বার্থগত দিকের বিচারেই বিএনপি’র বিরোধিতা ও নিন্দা করেন?
আশাকরি উভয়পক্ষ এটা ভেবে দেখবেন।
আমাদের জাতীয় প্রবনতা হলো আমরা সবসময় এক পৃষ্ঠের অবয়ব দেখি আর সে অনুযায়ীয় রিঅ্যাক্ট করি।
অনেকে হয়তো ভাবছেন হঠাৎ আমি বিএনপি’র ভালো-খারাপ নিয়ে মনোযোগী হলাম কেন? সরকারী দল বা নিজের দল নিয়ে আমার কী বক্তব্য?
আসলে ব্যপারটা হলো নিজের দলের প্রশংসা করা নিয়েতো কোন সমস্যা নাই। কিন্তু নিজ দলের সমস্যা বা দূর্বলতা পাবলিকলি বলার সাহস এই বাংলায় কোন রাজনৈতিক কর্মীর আছে বলে আমার জানা নাই। আমার অন্তত সে সাহস নাই।
আর সরকারী দলের ত্রুটি বললেতো ৫৭ ধারা প্রস্তুত আছেই!!!!!
লেখক:মুজিবুর রহমান মঞ্জু ,সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি, ইসলামী ছাত্রশিবির !