

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে নৌকার মাঝি হয়েছেন হাজী মো. সেলিম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী, এই রাজনীতিবিদের নেই নিজস্ব কোনো জমি (কৃষি ও অকৃষি জমি) এবং বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট। হলফনামা অনুযায়ী তার রয়েছে দালান; যার আর্থিক মূল্য ১৮ কোটি ৪৭ লাখ ৯ হাজার ৬২৮ টাকা।
একাদশের নির্বাচনি হলফনামায় এমন চিত্রের দেখা মিলেছে। হলফনামায় কৃষি জমির পরিমাণ ও অকৃষি জমির পরিমাণের ঘরে লেখা রয়েছে ‘প্রযোজ্য নহে’। একই সঙ্গে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট সংখ্যার ঘরেও লেখা রয়েছে ‘প্রযোজ্য নহে’। তার স্ত্রীর কৃষি জমির পরিমাণ, অকৃষি জমির পরিমাণ এবং বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যার ঘরটি ফাঁকা।
হলফনামায় হাজী মো. সেলিম জানিয়েছেন, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে তার আয় ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০৫ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীলরা এই খাত থেকে আয় করেন ১৯ লাখ ৭১ হাজার ৭৪ টাকা।
এ ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামাতেও কৃষি জমি, অকৃষি জমি এবং বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের ঘর ফাঁকা ছিল। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রীর বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যার আর্থিক মূল্য ছিল ২৩ লাখ টাকা।
এদিকে গত পাঁচ বছরে হাজী সেলিম ও তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে দেড় গুণ করে। হলফনামা অনুযায়ী সেলিমের চেয়ে তার স্ত্রীর হাতে নগদ টাকা ও ব্যাংকে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা বিচার-বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রের দেখা মিলেছে।
দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে হাজী সেলিমের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৮৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ বা ২৪ কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮০ টাকা। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী তার অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকার কিছু বেশি এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৬১৮ টাকা। তার স্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অর্থাৎ পাঁচ বছর আগে তার স্থাবর সম্পত্তি ছিল ১৬ কোটি ৮২ লাখ ৪৯ হাজার ৬২৭ টাকা; যা এক কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৪৭ লাখ ৯ হাজার ৬২৮ টাকা।
কমার দিক থেকে হাজী সেলিমের বার্ষিক আয় কমেছে ৬০ লাখ ৮৮ হাজার টাকার কিছু বেশি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল তিন কোটি এক লাখ ৫০ হাজার ৬১৮ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী তা কমে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৪০ লাখ ৬২ হাজার ১৭৯ টাকা।
এদিকে হাজী সেলিমের স্ত্রীর চার কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি কমলেও তার ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে। গত পাঁচ বছরে তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ১০ কোটি ৪৯ লাখ আট হাজার ৪০৩ টাকা। পাঁচ বছর আগে তার ১৩ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি ছিল, যা পাঁচ বছর পর এসে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ২৩ কোটিতে।
স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি হাজী সেলিমের ওপর নির্ভরশীলদের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। পাঁচ বছরে তার ওপর নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী তাদের অস্থাবর সম্পত্তি না থাকলেও একাদশের হলফনামা অনুযায়ী তাদের ১৯ কোটি ৮০ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৪ টাকার অস্থাবর সম্পত্তি হয়েছে।
এক নজরে হাজী সেলিমের দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা। গ্রাফিক্স: প্রিয়.কম
সেলিমের পরিবারের হাতে নগদ অর্থ প্রায় পাঁচ কোটি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী, হাজী সেলিমের পরিবারের হাতে (নিজ নামে+স্ত্রীর নামে+নির্ভরশীলদের নামে) নগদ অর্থ রয়েছে চার কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার ৫৫৫ টাকা। এর মধ্যে হাজী সেলিমের নিজের কাছে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৪৫৮ টাকা, স্ত্রীর কাছে দুই কোটি ৯ লাখ ৪০ হাজার ৫৭০ টাকা এবং নির্ভরশীলদের কাছে রয়েছে দুই কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ৫২৭ টাকা।
হিসাব অনুযায়ী, হাজী সেলিমের চেয়ে তার স্ত্রী ও নির্ভরশীলদের হাতে এবং ব্যাংকে বেশি টাকা রয়েছে।
এদিকে সেলিমের ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে টাকা রয়েছে এক কোটি ৩৪ লাখ পাঁচ হাজার ১০৫ টাকা। বিপরীতে তার স্ত্রীর ব্যাংকে রয়েছে তিন কোটি ৭৯ লাখ সাত হাজার ৮৫ টাকা এবং নির্ভরশীলদের নামে ব্যাংকে রয়েছে দুই কোটি তিন লাখ ৫০ হাজার ৭০০ টাকা।
অপরদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী সেলিমের হাতে নগদ অর্থ ছিল পাঁচ লাখ ২০ হাজার ৩১৬ টাকা এবং স্ত্রীর হাতে ছিল এক লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা। একই হলফনামা অনুযায়ী, তার ব্যাংকে ছিল ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৪০৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ছিল এক কোটি ৬৪ হাজার ১৫ টাকা। সেই সময়ে নির্ভরশীলদের নামে নগদ এবং ব্যাংকে কোনো অর্থ ছিল না।
সেলিমের বাড়িতে নেই ইলেকট্রনিক সামগ্রী
দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনি হলফনামা অনুযায়ী, হাজী সেলিমের বাড়িতে কোনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী নেই বলে উল্লেখ রয়েছে। উভয় হলফনামায় এই ঘর দুটি ফাঁকা ছিল।
প্রিয়