
নুর মোহাম্মদ
টার্কিতে সৌদি আরবের কনস্যুলেটের ভেতর ঘটে যাওয়া বেদনাবিধুর ঘটনাপ্রবাহের উপর গত সপ্তাহ জুড়ে নজর রাখছিলাম।
যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের বীভৎস, কুৎসিত চেহারা আরেকবার বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশিত হলো। জিঘাংসা কাকে বলে, অসহিষ্ণুতা কাকে বলে, বর্তমান সৌদি রাজবংশকে দেখলে উপলব্ধি করতে পারবেন।
সৌদি আরবের পেশাদার ১৫ জন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা অফিসার ইস্তাম্বুলে উড়ে গিয়েছিলেন বিশেষ বিমানে। ৬ ঘন্টার বিশেষ অভিযানে নিজেদের কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়েছে একজন সৌদি নাগরিককে।
জামাল খাসোগি, প্রখ্যাত সৌদি সাংবাদিক। বরাবরই সৌদ রাজবংশের সমর্থক ছিলেন, আল আরাবিয়া টিভির প্রধান সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। যুবরাজ বিন সালমানের প্রথম দিকের সমর্থক হলেও ধীরের ধীরে দূরে সরে যান। ইয়েমেন যুদ্ধ, ইখওয়ান-হামাস নিয়ে যুবরাজের হিংস্রতা মানতে পারেনি খাগোসি। যুবরাজ সৌদিতে ভিন্নমতের মানুষদের গ্রেফতার শুরু করলে জনাব জামাল খাগোসি স্বেচ্ছা নির্বাসনে আমেরিকা পাড়ি জমান।
৫৯ বছরের এই প্রখ্যাত সাংবাদিক ওয়াশিংশন পোস্ট এ লিখতেন। টার্কি নাগরিক এক মহিলার সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে করতে টার্কিতে এসেছিলেন। টার্কি আইনানুসারে টার্কি নাগরিককে বিয়ে করতে হলে সৌদি কনস্যুলেট থেকে কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন ছিল।
খাসোগি সেই ডকুমেন্টস নিতেই কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে কনস্যুলেটে যাওয়ার পরে তাকে ২ অক্টোবর যেতে বলা হয়েছিল।
এদিকে সৌদি আরব তাকে পৃথিবী থেকে মুছে দেয়ার হিংস্র পরিকল্পনায় ব্যস্ত। রিয়াদ থেকে ১৫ সদস্যের পেশাদার কিলার গ্রুপ বিশেষ বিমানে উড়ে আসলো ইস্তাম্বুলে। ১৫ জনের টিমে একজন সার্জনও ছিলেন।
খাসোগি তার হবু স্ত্রীকে কনস্যুলেট ভবনের বাহিরে রেখে ভেতরে ঢুকেছিলেন ২ অক্টোবর দুপুরে। এটাই শেষ ঢোকা। আকাশ দেখার সৌভাগ্য আর হবে না সম্ভবত।
ধারণা করা হচ্ছে, কনস্যুলেটের ভেতরের তাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। লাশ কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। সন্ধায় কনস্যুলেট থেকে ৬টা কালো রঙয়ের গাড়ি বের হয়ে এয়ারপোর্ট যায়।
কয়েকটা তথ্যঃ
একঃ ১৫ জনের কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল, যাদের প্রত্যেকের পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। তাদের ১৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং একজন ডাক্তার। ৪ দিনের জন্য টার্কিতে ঢুকলেও মাত্র ৬ ঘন্টা পরে তারা ফিরে চলে যায়।
দুইঃ ঘটনার দিন কনস্যুলেটের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড উধাও! সৌদি আরব প্রথমে বলেছে ক্যামেরা নষ্ট ছিল, তারপরে বলেছে ক্যামেরা ঠিক ছিল, কিন্তু তখনকার রেকর্ড রাখা হয়নি। কনস্যুলেটের ক্যামেরা নাকি কেবল প্রয়োজনের সময় রেকর্ড রাখে। কী গল্প! একটা দেশের কনস্যুলেট ভবনে নাকি সিসি ক্যামেরার এমন বেহাল দশা হয়!
তিনঃ সেদিন কনস্যুলেটের প্রায় সকল কর্মকর্তা-কর্মচারিকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়া হয়। বলা হয়েছিল, একটা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মিটিং হবে।
Muhammad Noman ভাইয়ের ওয়ালে বিস্তারিত পড়ে কিছুক্ষণ থমকে ছিলাম। হজম করতে কষ্ট হচ্ছিল। মনে হচ্ছে, একটা থ্রিল মুভির শ্যুটিং!
মোহাম্মাদ বিন সালমানের নিষ্ঠুর চেহারা যত দেখছি, তত অবাক হচ্ছি। এরা নাকি কাবা ঘরের রক্ষক! রক্ত দিয়ে সারা শরীর লাল হয়ে আছে। পৃথিবীর যত ঘৃণা আর অভিসম্পাত, তাবৎ সবটুকু আল সৌদ রাজবংশের উপর। ধ্বংস হোক শীঘ্রই এই সাম্রাজ্য।
মক্কা-মদিনা আমাদের সকলের। আল্লাহ্ তায়ালা নিশ্চয় এই দুটো শহর হেফাজত করবেন। বাকি সৌদি আরবের বর্তমান নেতৃত্বকে গলা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া সময়ের অন্যতম বড় দাবি। সৌদি জনগণ মুক্তি লাভ করুক জালিমদের বৃহত্তর কারাগার থেকে। কুলাঙ্গার রাজা এবং তার সন্তান আমেরিকা-ইসরাইলের পা চাটতে চাটতে অমানুষে পরিণত হয়ে গেছে।